বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পশ্চিমবাংলায় আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে সহযোগিতা না করায় নবান্নকে কড়া চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই চিঠিতে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, প্রতিনিধি দলকে সহযোগিতা করতেই হবে রাজ্যকে। সেই কড়া চিঠি পাওয়ার পরই অবশ্য সুর কিছুটা নরম হয়েছে নবান্নের। প্রতিনিধি দল দুটি করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারে বলে এদিন সন্ধ্যায় মুখ্যসচিব জানান।
সোমবারই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের আসা নিয়ে নিজের আপত্তি ও ক্ষোভের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। মুখ্যসচিবও জানিয়ে দেন, কেন এই রাজ্যে তারা এসেছে, তা পরিষ্কার করে না বোঝালে তাদের ঘুরে বেড়াতে দেওয়া হবে না। শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের রাজ্যে আসা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে চরম সংঘাতের পথেই যায় তৃণমূল সরকার। মঙ্গলবার সকালে বালিগঞ্জে বিএসএফ অফিস থেকে প্রতিনিধি দলটি গাড়ি নিয়ে বের হলেও রাজ্য সরকারের অসহযোগিতায় কোনও কাজই করতে পারেনি। তাদের গতিপথে সমস্ত রাস্তাগুলিতেই কড়া নজরদারি ও নাকাচেকিং শুরু করে পুলিশ। ফলে মিনিট সাতেক পর প্রতিনিধি দলটি এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফের বিএসএফ কার্যালয়ে ফিরে যায়। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়িতেও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের অন্য দলটির সঙ্গেও একই ভাবে সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ।
এদিন দুপুরে বিএসএফ কার্যালয়ে যান মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। সেখানে তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, তা পরিষ্কার জানা যায়নি। তবে বৈঠক যে ফলপ্রসূ হয়নি, সে বিষয়টি বুঝতে অসুবিধে হয়নি প্রতিনিধি দলের বক্তব্যে। সেই সময় দলটি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে এখানকার ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে সব জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অপূর্ব চন্দ্র। রাজ্যের এই আচরণে তিনি নিজেদের অসন্তোষের কথা গোপন রাখেননি। সাংবাদিকদের জানান, রাজ্য সরকার তাঁদের কোথাও যেতে দিচ্ছে না। কোনও রকম সহযোগিতাও করছে না। স্পষ্টই ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু পশ্চিমবাংলা নয়, দেশের অন্য রাজ্যগুলিতেও একই চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং প্রতিনিধি দলও গিয়েছে। প্রতিটি রাজ্যের সরকারই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ভালো আচরণ করেছে। কোথাও কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে তাদের পড়তে হচ্ছে না। ব্যতিক্রম শুধু পশ্চিমবাংলা। কেন যে প্রতিনিধি দলকে তারা কাজ করতে দিতে চাইছে না, বোঝা যাচ্ছে না।’
শুধু এই মন্তব্য করেই তিনি থেমে যাননি। নিয়ম মেনে সমস্ত তথ্য জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। তার পর সন্ধের আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রীতিমতো কড়া চিঠি পাঠায় রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে। সেই চিঠিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, প্রতিনিধি দলকে সব রকম সাহায্য করতেই হবে রাজ্যকে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব বলেন, ‘পশ্চিমবাংলাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, যে ভাবেই হোক তারা যেন ১৯ এপ্রিলের নির্দেশ পালন করে।’ শুধু তাই নয়, তিনি এ কথাও তখন জানিয়ে দেন, বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী রাজ্যকে এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, প্রতিনিধি দলের ব্যাপারে পশ্চিমবাংলার অনড় মনোভাব বরদাস্ত করবে না দিল্লি। এর পরই সুর নরম হয় রাজ্যের। সন্ধের পর মুখ্যসচিব জানান, চিঠি এখনও হাতে আসেনি। চিঠি পাওয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য জানানো হবে। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে যা করার রাজ্য করবে বলে তখনই তিনি জানিয়ে দেন। সেই সঙ্গে এ কথাও জানান, যতটুকু সম্ভব সাহায্য করা হবে প্রতিনিধি দলকে।